Page images
PDF
EPUB

যাবজ্জীবন মনস্তাপে কাল যাপন করে আর মিথ্যাচারি ব্যক্তি কোন মতে বিশ্বাস্য নহে তিনি কোন্ সময় যে কি করিবেন তাহার নিশ্চয় কি ইহার অধিক আর ক্লেশ কি ঈদৃশ দুর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তির মৃত্যুই ভাল কিন্তু তিনি মিথ্যাচরণ দ্বারা পরাৎপর পরমেশরের নিকটেও তিনি অনাদৃত হন কারণ সত্যময় জগদীশ্বরের আজ্ঞা তিনি উপেক্ষা করিয়াছেন তাঁহার অপ্রীয় হইলে কি কি দুরবস্থা না হইতে পারে অর্থাৎ সকলি হয় ।

সত্য কথা প্রয়োগ জন্য মনুষগণ জনগণ সন্নিধানে অদৃত হইয়া পরমসুখে বাস করেন আর রাজমান্য রাজপূজ্য হওত যাবজ্জীবন সত্যস্বরূপ রসাস্বাদনে মগ্ন থাকিয়া পরমেশ্বরকে বিশেষরূপে জানিতে পারেন অতএব সকল ব্যক্তির সত্য কহা কৰ্ত্তব্য ।

শ্রীযদুনাথ দাস ঘোষ ৷

JUDOONAUTH GHOSE,

1st Class Hooghly College.

সত্যের মহিমা বর্ণনা কর ।

সত্যই সার পদার্থ । সত্যের উপর নির্ভর করিয়া পৃথিবীর সমুচয় কৰ্ম্ম সম্পাদন হইতেছে । অতি সামান্য গৃহকৰ্ম্ম অবধি পুরাবৃত্ত লেখক ও জ্যোতির্বেত্তার নিগুঢ়ানুসন্ধান পৰ্য্যন্ত সত্যই সকলের আধার । পরম অনুকম্পা জগদীশ্বর যদ্যপি মনুষ্যের মনোমধ্যে সত্যের প্রতি প্রেম সংস্থাপন না করিতেন তবে মনুষ্য সমাজ কুত্রাপি স্থায়ী হইতে পারিতনা কোন বিপুল বিসারদ গ্রন্থকর্ত্তা উল্লেখ করিয়াছেন যে এই পৃথিবী মণ্ডলস্থ অত্যন্ত মিথ্যাবাদী ব্যক্তিও জীবনকালের মধ্যে শতাংশের একাংশের অধিক মিথ্যাবাক্য ওষ্ঠ হইতে নির্গত করেনা ।

k

অতএব সত্য প্রতিপালন করা জগদীশ্বরের প্রধান আজ্ঞাবৎ জ্ঞান করিতে হইবেক এবং তদীয় আজ্ঞা উলনে যে দোষ স্পর্শে মিথ্যাবাদী ব্যক্তি সেই দোষের অপরাধী |

সত্যের অবহেলাই সকল পাপের মূল। সত্যের প্রতি আদর থাকিলে কোন পাপ প্রবেশ করিতে পারেনা | মনুষ্য লজ্জা বশত আপনকৃত অপকৰ্ম্ম অন্য লোকের নিকটে প্রকাশ করণে অনেচ্ছ কিন্তু সত্যবাদী হইলে অবশ্যই প্রকাশ করিতে হয় এবম্বিধায়ে সত্যপরায়ণ ব্যক্তির নিকটে পাপ সমাগম করিতে পারেনা |

[ocr errors]

ঐহিক ও পারলৌকিক সুখের প্রতি যত্নবান হইলে সত্যের অনাদর কুত্রাপি শ্রেয়কর নহে ৷ মিথ্যাবাদী ব্যক্তিকে সৰ্ব্বদা চিন্তাকুল থাকিতে হয় কিজানি কখন তাহার মিথ্যাকথা প্রকাশ হইয়া তাহার প্রতি লোকের অবিশ্বাস জন্মে এবং তদ্বারা তাহার মানের ও মুখের হানি হয় কিন্তু সত্যবাদিকে এরূপ ভাবনায় কোন কালেই পতিত হইতে হয় না সত্য স্বয়সিদ্ধ কাহারও সাহার্য্য অপেক্ষা করে না ৷ অপিচ “ অদ্য বা অব্দ সতান্তে ” মনুষ্যের মরণই নিশ্চয় অতএব যদ্যপিও ইহলোকে মিথ্যাবাক্য প্রয়োগের দ্বারা কাহারো সুখ সম্ভাবনাহয় তথাপি জীবনান্তে বিশ্বকর্তার বিচারাধীন হইয়া অনন্তকাল পৰ্য্যন্ত দুঃখ ভোগ করিতে হইবেক ইহা বিবেচনা করিয়া তদ্বিষয়ে ক্ষ্যান্ত থাকা উচিত ৷

66

সর্ব্ব দেশেরই উত্তম উত্তম গ্রন্থে সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব ও মিথ্যার অপকৃষ্ট স্বভাব বর্ণিত আছে ৷ মহাভারতীয় স্বর্গারোহণ পর্ব্বে লিখিত আছে যে ধৰ্ম্মপরায়ণ রাজাযুধিষ্ঠীরকেও নরক দর্শন করিতে হইয়াছিল। কুরু পাণ্ডবের কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন কৃষ্ণপ্রভৃতি অনেকে দ্রোণাচার্য্যকে ম্লান এবং হতবল করিবার নিমিত্তে ধ্বনি করিতে লাগিলেন “ দ্রোণের হইয়াছে” কিন্তু তাহাতে

পুত্র অশ্বত্থামার প্রাণ বিয়োগ

.

66

যুধিষ্ঠীরের বাক্য না সুনিয়া আচার্য্য বিশ্বাস নাকরাতে কৃষ্ণের পরামর্শে রাজা যুধিষ্ঠীর উচ্চৈশ্বরে কহিলেন “ অশ্বথামা হত এবং অতিমৃদুস্বরে কহিলেন “ ইতি গজ” । চিরকাল সত্যপরায়ণ রাজা যুধিষ্ঠীর জীবনের মধ্যে এক মুহুর্ত কাল সত্যের প্রতিবন্ধক বাক্য প্রয়োগ করিয়াছিলেন মহাকবি ব্যাসদেব বর্ণনা করিয়াছেন যে এজন্যও তাঁহাকে নরকদর্শন করিতে হইয়াছিল ৷

মহাত্মা লার্ড বেকন গ্রিক দেশীয় কৰি লুকৃষিয়স হইতে এই বচন উদ্ধৃত করিয়াছেন যে “জ্ঞানময় পর্ব্বতোপরি আরোহণ করিয়া সত্যের উপর অবলম্বন করত যে ব্যক্তি নিম্নস্থ কুঝ্যটিকা স্বরূপ অজ্ঞান ও অসত্যের সহিত সংশ্রব না করিয়া তদুপরি দৃষ্টি করেন তিনিই পরম সুখী” ফলত মানব জীবন ধারণ করিয়া সত্যের সহিত বিসম্বাদ করিলে সে জীবন কেবল বিষময় | তাহাতে সুখের লেশমাত্র নাই ৷

পরন্তু সত্যের আলোচনায় মনের স্ফূর্ত্তিজন্মে মানসিক গুণ সকল সুন্দররূপে বিকসিত হয় এবং স্বভাবের সৌন্দর্য্যতার প্রভাব হয় ৷ দর্শন শাস্ত্রের নিগুঢ় বিতর্ক জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শিত। ভূতত্ত্বের সম্যক জ্ঞান কেবল সত্যের মহিমা সূচক। সত্য মূলিভূত না হইলে সেসকল হইতে পারিতনা ৷

অবশেষে এই বক্তব্য যে সত্য পরিত্যাগ করিয়া অসত্যের উপাসনা কেবল বিচলিত মনের কৰ্ম্ম ।

শ্রী প্রশন্নকুমার সর্ব্বাধিকারী ।

হিন্দু কালেজ ।

PROSUNNO COOMAR, SURBADHICAURY, .

1st Class Hindu College.

সত্যের মহিমা বর্ণনা কর ।

সত্য পরমেশ্বরের স্বরূপ এই সত্য মনুষ্যের হৃদয়ে প্রবিষ্ট হইলে তাহার প্রকৃতিকে দেবত্তল্য করে ৷ অন্ধ কূপ হইতে তাহাকে মুক্ত করিয়া জগন্নিয়ন্তার অপার কীর্ত্তি সকল তাহার সন্মুখে বিস্তৃত করে ও তাহার নিয়ম প্রতিপালনে যত্নশীল করে । সত্যের মহিমা অনির্ব্বচনীয় ও চিরস্থায়ী। এই পৃথিবীস্থ তাব‍ৎ বস্তুরই জন্ম ও সংহার আছে কিন্তু সত্যে বিনাশ নাই ৷ গগণে যাবৎকাল চন্দ্র সূর্য্য কিরণ করিবেন এবং যাবৎ পরমেশ্বর তাহার মহিমা প্রকাশার্থে নূতনং কীর্ত্তি করিবেন তাবত্ সত্যের প্রভা নির্ব্বাণ হইবেক না |

মনষ্যের জীবন ধারণ জন্য যেমন প্রাণ বায়ুর আবশ্যক সেই প্রকার সত্যের প্রভা ও আবশ্যক। সতা বিহিনে প্রাণ থাকিলে মনষ্য মনুষ্য নহেন এই যে অকিঞ্চিৎকর দেহ যাহা আমরা স্নেহপূর্ব্বক প্রত্যহ নালন পালন করিতেছি ইহার কালক্রমে কিছুমাত্র চিহ্ন থাকিবেক না, মস্তক অবধি চরণ পৰ্য্যন্ত ধুলিসার হইবেক, কিন্তু ইহার মধ্যে সত্যের কোন অংশ থাকিলে কেবল তাহাই অবিনস্বর থাকিবেক ।

আমাদিগের স্বভাব প্রকৃত পাপাশক্ত । যদ্যপি জ্ঞানাঙ্ক শ দ্বারা রিপুকে দমন না রাখি তবে ঘোরতর পাপাচ্ছন্ন হইয়া রশাতল গামী হই । অতএব সত্যের আলোচনা না করিলে আমাদের কি দশা ঘটে তাহা বর্ণনা যোগ্য নহে ।

সত্যের আলোচনা মনুষ্যের প্রধান কৰ্ম্ম । আশ্চর্য এই যে কেহং সত্যের ফলাফল জ্ঞাত থাকিয়া ও মিথ্যার ব্রতে ব্রতী হয়েন ইহার কারণ এই যে তাহারা স্বীয় বশ নহেন ৷ পরমেশ্বর আমাদিগকে এই পৃথিবীতে ক্ষণিক কালের কারণ পরিক্ষাবস্থায় স্থাপন করিয়াছেন ইহাতে আমাদিগের পক্ষে এই সৰ্ব্বত ভাবে উচিত যে নিসা নিবারণ পূর্ব্বক তাঁহার

নিয়ম প্রতিপালন পূর্ব্বক পরিশেষে পরম সুখে মগ্ন হইয়া চিরকাল যাপন করি কিন্তু যদি তাহাতে আমরা স্বয়ং বুদ্ধি ও জ্ঞানকে মন্দ কৰ্ম্মে তৎপর করিয়া কেবল ইন্দ্রিয় ও ঐহিক সুখ সম্ভোগে রত থাকি তবে স্বয়ই নষ্টের মুলাধার হই যে ব্যক্তি স্বীয় জ্ঞান ও বুদ্ধি দ্বারা এই পৃথিবীকে বৃথা জ্ঞান করিয়া পরমেস্বরোপরি নির্ভর পূর্ব্বক সত্যালোচনায় মগ্ন থাকে সে যথা এক পর্ব্বতোপরি স্থিতি হইয়া নিম্নের উন্মত্ততা দৃষ্ট করিয়া কৃতার্থ চিত্তে স্বীয় অবস্থার তাবৎ ফল ভোগ করে।

.

এই বিস্তৃত ভারতভূমি যাহা পূৰ্ব্বর্তন কালে উজ্জ্বলমান ও বিখ্যাৎ ছিল, হায়! এইক্ষণ তাহার কি দুর্দশা হইয়াছে । যেং জ্ঞানীরা ও মহাত্মারা এই দেশকে এককালে দীপ্তিমান করিয়াছিলেন তাঁহাদের সদৃশ আর কেহ উদয় হইলেন না অন্ধকার দ্বারা আবৃত হইয়া কতং মহাবিজ সকল বিনষ্ট হইয়াছে, কতং উত্তম হীরক অপ্রকাশিত রহিয়াছে, ও কতং উত্তমোত্তম পুষ্পের সুগন্ধ মলিন বায়ুদ্বারা বিনষ্ট হইয়াছে। ভারতবর্ষে বর্ত্তমান অবস্থার সহিত পূর্ব্বাবস্থা ত্তলনা করিলে অন্তঃকরণে কেবল ক্ষুব্ধতা জন্মে। এই দেশ বাসিয়েরা মিথ্যার প্রবঞ্চনা দ্বারা এককালে অন্ধ হইয়া মিথ্যাকে সত্য স্বরূপ পূজা করিতেছেন এবং সত্যকে মিথ্যা জ্ঞানে অনাদর করিতেছেন । যখন কেহ সাহসী হইয়া তাহাদিগকে সত্পথাবলম্বী করাইতে প্রবৃত্ত হয়েন তখন তাহারা দেব দেবীর নাম উচ্চৈস্বরে বাদন প্রযুক্ত তাহার সকল চেষ্টাকে নিষ্ফলা করিয়া পরে তাহাকে স্বীয় সমাজ হইতে বহিস্কৃত করিতেছেন ৷ তাহারা স্পষ্ট দেখিতেছেন যে এদেশ পাপাক্রান্ত হইয়াছে, ও স্বং গৃহেও অবিচারের প্রাদুর্ভাব দেখিতেছেন, তথাপি এইসকল অনিষ্টাচার দমনের কোন হেতু করিতেছেন না ৷ সত্য বিহিনে এই পুকার সকল দশা ঘাটিয়াছে, এবং যদিও প্রাতঃকালের সূর্য্যের প্রভার ন্যায় এই ভারত ভূমিকে সত্যের প্রভা কিছু। আলোকময়

« PreviousContinue »